শুক্রবার ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Riya Patra | ১৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৮ : ৩৭Riya Patra
রিয়া পাত্র
২০১৯-এ এই কেন্দ্র থেকেই ভোটপ্রচার করেছিলেন স্বামীর হয়ে। জিতিয়েছিলেন। মাঝে বিস্তর কাহিনি। বিজেপির সৌমিত্র খাঁর প্রাক্তন স্ত্রী এবার তাঁরই প্রতিদ্বন্দ্বী। কেউ বলছেন তাঁর লড়াই এবার ঘরের মাঠে, কেউ বলছেন এটা তাঁর প্রেস্টিজ ফাইট। প্রতিপক্ষ, প্রাক্তন স্বামী বলছেন তাঁকে রাজনৈতিককর্মী বা সমাজকর্মী বলে মনেই করেন না। বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল।
* শুরু থেকেই জোরকদমে প্রচার চালাচ্ছেন, কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
সুজাতা: আমি বিষ্ণুপুরের তৃণমূল প্রার্থী। এই কেন্দ্রে মমতা ব্যানার্জির যে উন্নয়ন এবং মহিলাদের যে সম্মান দিয়েছেন, তাতে আমি নিশ্চিত, এবারে বিষ্ণুপুর লোকসভায় জোড়াফুল ফুটছেই।
* এই বিষ্ণুপুর কেন্দ্রেই, ঠিক ৫ বছর আগে ১৯-এর লোকসভা ভোটে অন্য দলের হয়েও প্রচারে প্রায় একই বার্তা দিয়েছিলেন। এটা আপনার সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে না?
সুজাতা: না। আমার সেই সময়কার প্রচার দেখলে বুঝতে পারবেন, আমার লড়াই তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ছিল না। ছিল একজন স্ত্রীর কর্তব্য পালন। আমার লক্ষ্য ছিল ঐ লড়াই জিততে হবে।
* অর্থাৎ দল ফ্যাক্টর ছিল না?
সুজাতা: না, তৃণমূল কংগ্রেস নাকি অন্য কোন দল বিপরীতে সেটা বিষয় ছিল না। আমি শুধু একনিষ্ঠ ভাবে স্ত্রীর কর্তব্য পালন করেছিলাম। যাঁর জন্য করেছিলাম সে আমার ওপর এত নির্যাতন, অত্যাচার করেছে দিনের পর দিন। আমি বাড়ি না ছেড়ে এলে আমি বুঝেছিলাম মৃত্যু হবে। আমার দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি, দাদার মতো অভিষেক ব্যানার্জি যেভাবে আমাকে সুরক্ষা দিয়েছেন, সম্মান দিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসকে আমি ঘর মনে করি। এবার লড়াই এই পরিবারের জন্য। এই লড়াইয়ে জিতবে সত্য, ন্যায়। তাছাড়া বিষ্ণুপুরের যিনি বিজেপি প্রার্থী, বিদায়ী সাংসদ, তিনি ১০ বছরে এলাকার জন্য, ৭ টি বিধানসভার জন্য কোনও কাজ করেননি। কর্মীদের বিপদে ফোন পর্যন্ত ধরেন না। কেন তাঁকে মানুষ ভোট দেবে?
* তিনি তো দীর্ঘ সময় রাজনীতির ময়দানে থেকেছেন, এবং আপনাকে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ভাবতেও রাজি নন।
সুজাতা: ওঁর ভাবা, না ভাবায় সত্যি কিছু কি যায় আসে?
* আপনার লড়াই তো এবার তাঁর বিরুদ্ধেই...
সুজাতা: না না, ওঁকে কেন গুরুত্ব দেব। উনি চরিত্রহীন। মহিলাদের সম্মান করেন না। তবে আমি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিনা, সেটা ওঁর থেকে ভাল কেউ জানে না।
* ১০ বছরের সাংসদের বিরুদ্ধে আপনার লড়াই, ইউএসপি কী?
সুজাতা: স্বচ্ছতা, আমার চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং ন্যায়ের প্রতি নিষ্ঠা। আমি গত ৫ বছর ধরে এই এলাকায় মাটি কামড়ে রয়েছি। ছোট থেকেই এখানকার মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয়। প্রত্যন্ত গ্রামে প্রচারে গিয়েও আমাকে পরিচয় দিতে হয়নি যে আমি সুজাতা, আপনাদের প্রার্থী।
* তাহলে মানছেন, ২০১৯-এর প্রচার পর্ব কাজে লাগছে আপনার জন্য?
সুজাতা: পরিশ্রম করেছিলাম। কোন দল, কী প্রতিপক্ষ ছিল যায় আসে না। পরিশ্রম বৃথা যায় না।
* ২০১৯-এ ভোট জেতানোর পর, আরামবাগের ভোট লড়লেন আপনি, হারলেনও। ফের লোকসভা ভোটে প্রার্থী, রাজনীতিতে কী শিখলেন?
সুজাতা: আমি মাঝে জেলা পরিষদেও জিতেছি। বিধানসভা ভোট আমার পরের মাটিতে ছিল। কিন্তু বিষ্ণুপুর আমার ঘরের মাটি। তবু ২২ দিন সময়ে ৪৫ হাজার মাইনাস আসনকে লড়াই করে অনেকটা তুলে এনেছিলাম। মার্জিন ছিল ৬ হাজার। ক"দিন সময় পেলে সেটাও তুলে নিতে পারতাম। একটা জিনিস শিখেছি আমি, যদি মাটি কামড়ে পড়ে থাকা যায়, যদি মানুষের সঙ্গে থাকা যায়, তাহলে মানুষই আপনাকে লড়াইয়ে জায়গা দেবে। দেখুন আমি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে এসেছি। দিনে দিনে মানুষের সঙ্গে লড়তে লড়তেই এই জায়গায় এসেছি আমি।
* জিতে সংসদে গেলে বিষ্ণুপুরের জন্য প্রথম কী বলবেন?
সুজাতা: বিষ্ণুপুর লোকসভার প্রধান শহর মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর, পরতে পরতে ইতিহাস জড়িয়ে। আমার স্বপ্ন এই শহর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সিটি ঘোষিত হোক। সারা বিশ্ব থেকে ফান্ডিং এলে ঢেলে সাজানো যাবে শহরকে। এছাড়া এই কেন্দ্রে আরও অনেকগুলি পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। পর্যটনে জোর দেব আমি। মমতা ব্যানার্জি রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার বইয়েছেন। কিন্তু যেহেতু সাংসদের কাছ থেকে মানুষ কোনও কাজ পায়নি, তাই আমার ইচ্ছা, জিতে আসার পর সাংসদ তহবিল থেকে এখানকার মানুষ যে যে কাজগুলি করার জন্য প্রাইম টার্গেট দেবে, সেগুলি সম্পন্ন করা। তার মধ্যে রয়েছে বড়জোড়ায় উড়ালপুল, সোনামুখিতে বাইপাস করা। রেলের বেশ কিছু কাজ করার আছে।
* কত মার্জিনে জিতবেন বলে আশা রাখেন?
সুজাতা: আমি জ্যোতিষী নই। তবে বিশ্বাস আছে কেন্দ্রের মানুষের প্রতি। এখানকার মানুষ বলছেন ভোট ফর মমতা আর ওঁদের ঘরের মেয়ে সুজাতা।